তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম কি - তাহাজ্জুদ নামজের ফজিলত

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময়জ্জুদ নামাজ রাতের তৃতীয়াংশে পড়তে হয়। ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায় করলে ফজিলত ও মর্যাদার দিক থেকে ফরজ নামাজের পরেই তাহাজ্জুদের অবস্থান। রাতের আঁধারে যারা সেজদাতে রয়, দু চোখের অশ্রুতে নদী বয়ে যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম কি - তাহাজ্জুদ নামজের ফজিলত
পোস্ট সূচিপত্রঃআল্লাহতালা নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে দান করব। কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারী মুসলিম)।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রতিদিন রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ২ রাকায়াত ২ রাকায়াত করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। ২  রাকায়াত  করে সালাম ফিরাবে। আবার ২ রাকায়াত পড়বে। কিন্তু মহানবী (সাঃ) লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। সেজন্য দীর্ঘ কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

দুই রাকাতের জন্য নিয়ত করতে হবে। নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকাতায় সালাতি তাহাজ্জুদি মুতাওয়াজ্জিহান ইল্লা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। 

বাংলা অর্থঃ আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার। অন্যান্য নামাজের মতই তবে অনেকের মতে প্রত্যেক  রাকায়াতে  সূরা ফাতিহার পর তিনবার অথবা পাঁচবার সূরা ইখলাস পড়া ভালো।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময়

সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আপনি এ নামাজ আদায় করতে পারবেন। রাত ১২টা থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। আর শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম। কারণ শেষ রাতে নামাজে বসে, আল্লাহর কাছে বান্দা কিছু চাইলে আল্লাহ অবশ্যই দান করেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের পর আমল

তাহাজ্জুদ নামাজের পর যে আমলগুলো করতে হবে  আল্লাহর ৯৯ টি নাম পড়তে হবে। সূরা পড়তে হবে যেমনঃ সূরা মূলক, সূরা দুখান, সূরা আর রহমান, সূরা মুয্যামিল, সূরা হাশর, সূরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা ইয়াসিন, সূরা কাহাফ ও অন্যান্য সূরা পড়া বরকতময়। এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। তাহাজ্জুদের আগে পরে কোরআন তিলাওয়াত করা উপকারী আমল।

৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত 

মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কিছু পেতে চাইলে একটানা ৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করুন।নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করে চেয়ে নেয়। অবশ্যই তার ভাল ইচ্ছাগুলো আল্লাহতালা কবুল করে নেবেন। তাই তাহাজ্জুদ নামাজের আগে ঘুমানো ও ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা অতি উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া কবুল হয়

শেষ রাতের দিকে পড়তে হয়। শেষ রাতের দিকে নামাজের দোয়া ও ইবাদত কবুল হয়। নবীজি (সাঃ) সময় বিশেষভাবে দোয়া করতেন। আল্লাহ তাআলা এ সময় তার দোয়া কবুল করে নিতেন। নবীজি যে দোয়া পড়তেন;

দোয়াঃ আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আংতা কায়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়ামান ফিহিন্না ওয়া লাকালহামদু। লাকা মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়ামান ফিহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আংতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ ওয়ামান ফিহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আংতা মালিকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি।

আরো পড়ুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়

ওয়া লাকাল হামদু আংতাল হাক্কু। ওয়া ওয়াদুকাল হাক্কু । ওয়া লিক্বাউকা হাক্কু। ওয়া ক্বাওলুকা হাক্কু। ওয়াল ঝান্নাতা হাক্কু। ওয়ান নারু হাক্কু। ওয়ান নাবিয়্যুনা হাক্কু। ওয়া মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাক্কু। ওয়াস সায়াতু হাক্কু। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু। ওয়াবিকা আমাংতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু। ওয়া ইলাইকা আনআবুতু। ওয়াবিকা খাসামতু। ওয়া ইলাইকা হাকামতু। ফাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখখরতু। ওয়ামা আসাররতু ওয়া মা আলাংতু। আংতাল মুকযদ্দিমু ওয়া আংতাল মুআখিখরু। লা ইলাহা ইল্লা আংতা আও লা ইলাহা গায়রুকা। 

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনারই জন্য সব প্রশংসা; আপনি আসমান জমিন ও এ দুইয়ের মাঝে বিদ্যমান।সবকিছুর নিয়ামক এবং আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আসমান জমিন এবং তাদের মাঝে বিদ্যমান সবকিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনারই জন্য সব প্রশংসা।

আপনি আসমান জমিনের নূর। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের মালিক। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি চিরসত্য। আপনার ওয়াদা চিরসত্য; আপনার সাক্ষাৎ সত্য; আপনার বাণী সত্য, জান্নাত তথ্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য, কিয়ামত সত্য।

আরো পড়ুনঃ ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয়

হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি আত্মসমর্পণ করলাম; আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; আপনার উপরে তাওয়াক্কুল করলাম, আপনার দিকে রুজু করলাম, আপনার সন্তুষ্টির জন্য শত্রুতাই লিপ্ত হলাম, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার আগের পরের ও প্রকাশ্য গোপন সব অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনি আগের পরের মালিক। আপনি ছাড়া সত্য প্রকৃত কোন ইলহা নেই, আপনি ছাড়া সত্য প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। (বুখারী মুসলিম)

অর্থাৎ রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ দোয়া কবুলের অন্যতম সময়। এ সময় নবীজির শেখানো পদ্ধতিতে দোয়া করলে মহান আল্লাহতালা তা কবুল করেন।

তাহাজ্জুদ নামাজ কি প্রতিদিন পড়তে হয়

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ (সা;) এর ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ (সা;) তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে কখনো পিছপা হয়নি। আল্লাহর প্রিয় হতে হলে প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া অতি উত্তম। তবে মাঝেমধ্যে বাদ পড়ে যায়, অথবা কোন কারনে নামাজ পড়তে পারে না এজন্য কোন গুনাহ হবে না। তবে নেক কাজ নিয়মিত করাই ভালো।

তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয়

অনেক মানুষ মনে করেন তাহাজ্জুদ নামাজ হালকা আলোতে বা অন্ধকারে পড়তে হয়। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। কিন্তু এই ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। পরিপূর্ণ অন্ধকারে সালত আদায়ের ব্যাপারে শরীয়তের উৎসাহ দেয় নাই। সেই জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ আপনি আলোতে পড়বেন নাকি অন্ধকারে পড়বেন সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। এটা নিয়ে কোন বাধ্যকতা নেই। আপনি আপনার মত করে পড়তে পারবেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজাত

তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজাত অন্যান্য নামাজের মতই। তবে নামাজের বিশেষ মোনাজাত হচ্ছে আল্লাহর কাছে মনের ইচ্ছা প্রকাশ করা আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া। রাতের আঁধারে দু চোখের অশ্রুতে আল্লাহর কাছে  কিছু চাইলে আল্লাহ ফেরাবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রেদওয়ান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url