প্রেগনেন্সি মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকা - গর্ভবতী মেয়েদের জন্য খাদ্য তালিকা

আজকের আলোচনা বিষয় প্রেগনেন্সি মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকা ও গর্ভবতী মেয়েদের জন্য খাদ্য তালকা। যারা সঠিকভাবে এই তালিকাগুলো জানেন না শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন অবশ্যই জানতে পেরে যাবেন প্রেগনেন্সি মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকা এবং গর্ভবতী মেয়েদের জন্য খাদ্য তালিকা।

পোস্ট সূচিপত্রঃআপনি প্রেগনেন্সি সময় খাবার গুলো গ্রহন করবেন সেটা বাচ্চার উপর প্রভাব পড়বে। সেজন্য ভালো দেখে শুনে বুঝে খেতে হবে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে অবশ্যই। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে পুষ্টির অভাব থাকলে শরীরে, সেটা বাচ্চার উপরে প্রভাব ফেলে। তাই জেনে নিন প্রেগনেন্সি মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকা ও গর্ভবতী মেয়েদের জন্য খাদ্য তালিকা।

উপস্থাপনা- প্রেগনেন্সি মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকা

গর্ভবতী অবস্থায় ফলিক এসিড যুক্ত খাবার খেতে হবে। ফলিক রয়েছে যেসব খাবারগুলোতে- পুদিনা পাতা, সবুজ শাকসবজি, কলা, এবং শুকনো ফলে রয়েছে ফলিক এসিড। যা গর্ভাবস্থায় শিশুর ব্রেইন বিকাশ করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত গর্ভধারণের আগেই ফলিক এসিড সেবন করে তাহলে আপনার অনাগত সন্তানের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

গর্ভবতী মায়ের কোন খাবার খাওয়া যাবে না

প্রেগনেন্সি মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকা, প্রেগনেন্সিতে কিছু কিছু ফল আছে যেগুলো খেতে নিষেধ করা হয়। গর্ভধারণের পর প্রতিটি নারী আনাগত সন্তানের কথা ভেবে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। অনেক মায়েরা চিন্তিত থাকে যে কি খাব বাকি খাব না সেজন্য আজকের বিষয়ে থাকছে গর্ভবতী মায়ের কোন খাবার খাওয়া যাবেনা। নিচে উল্লেখ করা হলো-

১। আনারসঃ গর্ভকালীন সময়ে আনারস খাবেন না কারণ আনারস খেলে জরায়ুতে তীব্র সংকোচন হতে পারে। অনেক সময় গর্ভপাত ঘটতে পারে। আনারসে থাকে ব্রোমেলাইন এটি একটি ইনযাই। যা প্রোটিনকে ভেঙে দেয় এর ফলে জরায়ু নরম হয়ে অকালে প্রস্রব হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় আনারস খাবেন না।

২। পেঁপেঃ পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও ভিটামিন থাকলেও গর্ভবতীদের জন্য এর ফল ততটা উপযোগী নয়। কারণ পেঁপে খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এই ফল প্লটেক্স সমৃদ্ধ যার রক্তপাত ও জরায়ু সংকোচন বা গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। এটি ব্রেইনের বিকাশকেও বাধা দিতে পারে। সেজন্য গর্ভকালীন সময়ে কাঁচা বা পাকা পেঁপে খাবেন না।

৩। আঙ্গুরঃ গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন। সবুজ বা কালো দুই ধরনের আঙ্গুরী ক্ষতিকর হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে মিশ্র মতামত আছে। কারণ আঙ্গুরে থাকা যৌগিক রেজভেটট্রোল গর্ভবতী নারীর জন্য বিষাক্ত হতে পারে। কালো আঙ্গুরের চামড়া হজম হতে সমস্যা হতে পারে গর্ভাবস্থায়। কারণ এই সময় হজম ব্যবস্থা দুর্বল থাকে। 

আরো পড়ুনঃ ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কিভাবে দূর হবে

৪। তেঁতুলঃ গর্ভাবস্থায় তেতুল এড়িয়ে চলুন কারণ এটি ক্ষতিকর হতে পারে। তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা গর্ভবতী নারীদের এড়ানো উচিত। এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরের প্রোটেস্টনের উৎপাদন কমে যায়। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। এমনকি ব্রেনের কোষেরও ক্ষতি হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাবেন না।

৫। তরমুজঃ গর্ভাবস্থায়  তরমুজ খেলে শরীরের সব টক্সিন ভেতর থেকে বের করে দিবে। তবে গর্ভাবস্থায় ততটা খারাপ নয় তবে এর প্রভাব শরীরের করতে পারে। তরমুজ অতিরিক্ত সেবনে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে তুলে। অতিরিক্ত সেবনে মূত্রের সঙ্গে টক্সিনো বের করে দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় তরমুজ খেলে বেশি খাবেন না অল্প খাবেন।

৬। খেজুরঃ খেজুর অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে কিন্তু গর্ভাবস্থায় খাবে না এই প্রধান কারণ হলো শরীরকে উত্তপ্ত করে।  সংকোচনের জরায়ুর পেশীমধ্যে পড়তে পারে। যদি খেতে ইচ্ছে করে তাহলে একটি করে খাবেন।

গর্ভাবস্থায় কোন ফল খাবেন

আজকের আলোচনাই থাকছে প্রেগনেন্সি মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকা ও গর্ব অবস্থায় কোন ফল খাবেন এই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

  • কলা- কলায় রয়েছে ফোলেট ভিটামিন সি, বি6, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর মত মূল পুষ্টি রয়েছে। ফোলেট স্নায়ু টিউব ত্রুটি থেকে ভ্রূণকে রক্ষা করে। ভিটামিন বি6 আপনার সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। 
  • আপেল- গর্ভাবস্থায় আপেল খেলে অনেক ভালো উপকারী পাবেন এটি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। কারণ এটি খেলে আপনার শিশুর শক্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি আপনার সন্তানের বেড়ে ওঠার সময় শিশুর হাঁপানি এজমা এইসব ঝুঁকি এড়াতে সহায়তা করে। এই পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এতে ভিটামিন এ, ই এবং ডি থাকে।
  • আতা- আতাতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং সি। এতে শিশুর চোখ, চু্‌ল, ত্বক ঠিক রাখে। এই ফল আপনার শিশুর জ্ঞান বাড়াই বলে ডাক্তাররা সুপারিশ করে।

  • নাশপাতি- এতে ফলিক এসিড উচ্চ পরিমাণে থাকে। এটি হলো ভিটামিন সি এর বড় উৎস।
  • পেয়ারা- পেয়ারাতে পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা গর্ভধারণের সময় পেতে হবে। পেয়ারাতে আছে ভিটামিন সি, ই আইসো ফ্ল্যাভোনয়েডস, ক্যারোটিনয়েড এবং পলিফেনল সমৃদ্ধ।
  • অ্যাভোকাডো- অ্যাভোকাডোতে লোহ্য রয়েছে। কলাইন আপনার শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাভোক্যাডো অন্যান্য ফলের তুলনায় বেশি ফোলেট আছে বলে জানা যায়। ভিটামিন সি, বি এবং কে-র একটি দুর্দান্ত উৎস। এতে ফাইবার, কলাইন, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে।
  • ডালিম- ডালিমে আছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ফোলেট, লোহ্য ও ভিটামিন সি রয়েছে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় ডালিম খাবেন।
  • চেরি- চেরিতে রয়েছে ভিটামিন সি। চেরি সাধারণত সর্দির মতো সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া চেরি প্লাসেন্টাতে কার্যকর ভাবে রক্ত সরবরাহ করতে নিশ্চিত করে।
  • আম- আম হলো মৌসুমী ফল এটি সব ঋতুতে পাওয়া যাবে না। আমে ভিটামিন সি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে যা হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে ও ক্ষুদ্র সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • কিউই- শ্বাসযন্ত্রের উপর একটি নিরাময়কারী প্রভাব আছে। কিউই আপনার সর্দি কাশী থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। কিউই রক্তে জমাট বেঁধে যাওয়া ঝুঁকি হ্রাস করে। কারণ এতে উচ্চমাত্রায় ফসফরাস উপাদান থাকে। কিউই রয়েছে ভিটামিন এ, ই, সি এবং পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড ও ফাইবারের মতো পুষ্টিতে ভরপুর।
  • স্ট্রবেরি- স্ট্রবেরি খেলে আপনার শ্বশুর হাড়কে শক্তিশালি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে ফাইবার, পটাশিয়াম ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে।
  • কমলালেবু- কমলা লেবুতে ভিটামিন সি রয়েছে যা পটাশিয়ামের একটি উৎস। এটি উচ্চ রক্তচাপ হ্রাসে সহায়তা করে।

গর্ভবতী মায়ের প্রোটিন যুক্ত খাবার

এখন আলোচ্য বিষয়ে থাকছে প্রেগনেন্সি মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকা ও গর্ভবতী মায়ের প্রোটিন যুক্ত খাবার এ সম্পর্কে। সন্তানের বুদ্ধি গ্রন্থের জন্য আয়োডিন খুবই জরুরী। তাই চেষ্টা করবেন খাবার তালিকায় আইডি যুক্ত লবণ রাখতে। 

প্রোটিন যুক্ত খাবারঃ 

  1. ডিম
  2. মাংস
  3. দুধ
  4. ওটস
  5. বাদাম
  6. ডাল
  7. ভূট্টা
  8. আলু
  9. ব্রোকলি
  10. ফুলকপি
  11. চিকেন
  12.  দুধের ছানা
  13. মাছ
  14. সবুজ রঙের শাক
  15. সবুজ রঙের সবজি
ইত্যাদি গর্ভাবস্থায় খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় আবশ্যের প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। তালিকায় সব রকমের প্রোটিন রাখতে হবে। আর সব সময় শুয়ে বসে থাকবেন না এতে করে শরীরে ভারী ভাব চলে আসে। হালকা পাতলা কাজ করার চেষ্টা করবেন এতে করে আপনার শরীর ও মন সুস্থ থাকবে।

গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করতে হবে

প্রেগনেন্সি মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকা ও গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করতে হবে এ বিষয়ে জেনে নিন। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন সময়ে আপনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটু বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে আপনার ও শিশু উভয়ের জন্য। পানির পরিমাণটা নির্ভর করছে আপনার শারীক গঠন অনুযায়ী।

দৈনিক পানি খাওয়ার হিসাব হলো আপনার বর্তমান ওজনকে ৩০ দিয়ে ভাগ দিন ফলাফল আসবে সেটাই আপনার পানির চাহিদা। ধরুন আপনার ওজন ৬০ কেজি এটাকে টিস দিয়ে ভাগ দিন কত আসে ২, আপনার পানির চাহিদা ২ লিটার। সাধারণ হিসাব অনুযায়ী আপনাকে আট আউন্স ১০ থেকে ১২ গ্লাস বা ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে। অথবা আপনি এ বিষয়ে ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে পারেন। তবে একবারে দুই গ্লাসের বেশি পানি পান করা উচিত না। 


একেবারে একসাথে পানি পান না করে বরং কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করুন। কারন একসাথে অনেক বেশি পানি পান করলে আপনার অস্বস্তিকর লাগতে পারে। সাধারণত আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খায় না তাই হাতের কাছে বোতলে ভরে পানি রাখুন।হাতের কাছে রাখলে আপনি যেকোনো সময় পানি পান করতে পারবেন। 

শেষ কথাঃ প্রেগনেন্সি মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকা - গর্ভবতী মেয়েদের জন্য খাদ্য তালিকা

আজকের শেষ আলোচনায় প্রেগনেন্সি মহিলাদের জন্য খাদ্য তালিকা এই সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে আশাকরি আপনাদের উপকারে আসবে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন নিজের প্রতি ও বাচ্চার প্রতি। এ সময় একটু নিজের প্রতি বেশি সতর্ক হওয়া দরকার। উক্ত বিষয়গুলোর সঙ্গে এতক্ষন সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এইরকম আরো বিষয় জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রেদওয়ান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url