ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয় - রাতে ঘুমানোর দোয়া

আজকের আলোচনার বিষয় মাধ্যমে জানানো হবে ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয় এবং রাতে ঘুমানোর দোয়া বিষয়ে। মুসলিমরা প্রতিটি কাজ বিসমিল্লাহ বলে সূচনা করেন। এতে কাজে আল্লাহর বরকত লাভ হয়। বিসমিল্লাহর ফজিলত অপরিসীম কিন্তু আমাদের অনেকের এ বিষয়ে অজানা। তাই আজকে আপনাদের জানাবো ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয় ও রাতে ঘুমানোর দোয়া।

ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয়

পোস্ট সূচিপত্রঃহাদিসে এসেছে, প্রত্যেক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়লে কাজে বরকত, কল্যাণ প্রবৃদ্ধি হয় ও পূর্ণতা আসে সুন্দরভাবে, কাজের পরিসমাপ্তি হয় এবং আমলনামায় সওয়াব লেখা হয়। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয় ও রাতে ঘুমানোর দোয়া।

বিবরণ / ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয়

বিসমিল্লাহ রাহমান রাহীম। ঘুমানোর আগে বাদূর দুআ পড়া মুসলিম সংস্কৃতি ও আদর্শে একটি সুন্দর প্রথা। এটি ইসলামে দেওয়া গয়ে বলা হয়, যা অর্থ করে, "আমি আল্লাহর নামে, রহমান ও রাহীম প্রতি আমি ঘুমাতে চাই।"

এই দুআটির মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর নাম উল্লেখ করে এবং তার রহমত ও করুণার দিকে তাকিদ করে, এবং আল্লাহর দয়া এবং মেহেরবানি প্রাপ্তির জন্য দু'আ করে। এটি ঘুমে প্রবল আত্মশ্রদ্ধা ও শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

সাধারণভাবে এই দুআটি মূলত ইসলামিক প্রথা এবং আদর্শে একটি অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মানুষ সকালে উঠার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে এই দুআটি পড়ে থাকে।

বিসমিল্লাহ এর ফজিলত

আজকের আলোচ্য বিষয় ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয় এবং রাতে ঘুমানোর দোয়া বিষয়ে। এখন জানব বিসমিল্লাহ এর ফজিলত সম্পর্কে। "বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম" এটি কুরআন হাকিমের একটি আয়াত। এই বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম এর ভেতরে আল্লাহ তায়ালার তিনটি নাম রয়েছে। ১. আল্লাহ ২. রহমান ৩. রাহিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর উপরে আমল করলে আল্লাহ তায়ালা বরকত নাযিল করেন।

বিসমিল্লাহ এর ফজিলত, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর অর্থ হল আমি পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। সব ভালো কাজ শুরু করি আল্লাহর নামে তাহলে আল্লাহ সে কাজটি বরকতময় করে তোলে। তাই জন্য আমরা কোন কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ অথবা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে থাকি।

আরো পড়ুনঃ আখেরি চাহার সোম্বা কত তারিখ ২০২৩

পবিত্র কোরআন শরীফে ১১৪ টি সূরার মধ্যে সূরা তওবার ব্যতিরেকে অন্য বাকি ১১৩ টি সূরা শুরু করা হয়েছে " বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" দিয়ে। এছাড়া হাদিস থেকে জানা যায় আমাদের বিশ্বনবী প্রতিটি কাজ শুরু করতেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে। এই বিসমিল্লাহ ফজিলত ও অপরিসীম। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এই আয়াতটিকে কুরআনের মুকুট বলা হয়।

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এই আয়াতটিকে আল কুরআনের শ্রেষ্ঠতম আয়াত বলে উল্লেখ করেছেন। এই আয়াতের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিনের অতি দয়া করুণা সূচক রহমান ও রহিম নাম দুটো মানবকূলের জন্য সর্বাগ্রে উপস্থাপনা করা হয়েছে। এজন্য বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অনেক বেশি। বিসমিল্লাহ পাঠ করলে আল্লাহর নামের বরকতে অনেক অসাধ্য কাজ সহজ হয়ে যায়।

যে জিনিসের উপর বিসমিল্লাহ পড়া হবে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই সে জিনিসের বরকত দান করবে। বিসমিল্লাহ পড়লে শয়তান পরাজিত হয়। সে উক্ত স্থানে টিকতে পারে না তার কার্যক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যাই। হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স) বলেছেন, বিসমিল্লাহ বলে তুমি তোমার দরজা বন্ধ করো এতে শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারবে না। রাসূল (স) এরশাদ বলেছেন, যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয়না সে খাবারের শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তান ও ভক্ষণ করে।

ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয়

আজকের আলোচ্য বিষয় ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয়।ঘুমানোর পূর্বে কিছু আমল আছে যেগুলো রাসুল (স) করেছেন। ঘুমানোর সময় যদি কেউ ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়ে সারারাত সর্বপ্রকার বিপদ হতে নিরাপদ থাকিবে।শয়তান, চোর, ডাকাত, অগ্নিকাণ্ডে, দৈব মৃত্যু প্রভৃতি দুর্ঘটনা থেকে ওই ব্যক্তি রক্ষা পাবে।

আরো পড়ুনঃ আল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলত ও আমল

এছাড়াও যদি কেউ বিসমিল্লাহ পাঠ করে আল্লাহপাক তার গুনাগুলো মাফ করে দেন। উমর (র) এই আমলটি করতেন, টুপিতে বিসমিল্লাহ শরীফ আরবীতে লিখে দিলে মাথার সমস্ত ব্যথা ভালো হয়ে যায় এবং আরোগ্য লাভ হয়। এছাড়াও কোন ব্যক্তি ২১ বার বিসমিল্লাহ লিখে সঙ্গে রাখলে সকল লোকের নিকট সম্মান লাভ করবে কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

রাতে ঘুমানোর দোয়া

ঘুমানোর পূর্বের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমল। মানে প্রতিটি কাজ হল ইবাদাত ঘুমও ব্যতিক্রম নয়। যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের নির্দেশিত নিয়ম অনুযায়ী ঘুমায় তাতে ঘুমানোর পূর্বে কিছু করনীয় ও বর্জনীয় কাজ রয়েছে সেগুলো তুলে ধরা হলো। মহানবী (স) এশার নামাজের পর গল্প গুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন।

ঘুমানোর সময় দশটি সুন্নত আমলঃ

  • ঘরের দরজা আল্লাহর নামে বিসমিল্লাহ বলে বন্ধ করা
  • শোয়ার আগে বিছানা ঝেরে নেওয়া
  • ডান কাত হয়ে শোয়া
  • শরীরের নাপাকিস্তান ধুয়ে ওযু করে নেওয়া
  • বিনা কারণে অবুর হয়ে না শোয়া
  • ঘুমানোর সময় আগুনের বাতি জ্বালিয়ে না রাখা
  • দুঃস্বপ্ন দেখলে পাস পরিবর্তন করে শোয়া
  • খারাপ স্বপ্ন দেখলে শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া
  • খারাপ স্বপ্ন দেখলে সেটা কারো সঙ্গে না বলা
  • রাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হয়ে শোয়ার সুন্নত

আল্লাহর রাসূল (স) বলেছেন যদি কোন মুসলমান রাতে আল্লাহকে স্মরণ করে। ওযু শেষে শয়ন করে এবং রাতে জাগ্রত হয়ে দুনিয়া আখিরাতের কোন কল্যাণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন আল্লাহ তা তাকে দান করেন। হাদীস শরীফে ঘুমানোর আগে কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। সব দোয়া পড়তে না পারলেও ছোট্ট এই দোয়াটি পড়া যায়।

আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে কি হয়

দোয়া- "আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতো ওয়া আহ ইয়া"। অর্থাৎ, হে আল্লাহ তোমার নামে আমি স্বয়ং করছি এবং তোমারি দয়াই আমি পুরো জাগ্রত হবো। ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করলে ১ হাজার সাওয়াব সংযোজিত হয়। সূরা ইখলাস, সূরা নাস, সূরা ফালাক পড়ে শরীরে ফু দেয়ার সম্পর্কে আয়েশা সিদ্দিকা (র) আনহা বলেন, বিশ্বনবী প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন তখন দুই হাত একত্রিত করে তাতে সূরা ইখলাস সূরা নাস সূরা ফালাক পড়ে ফু দিতেন।

অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যতদূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বুলাতেন। আল্লাহর রাসূল (স) বলেন তুমি যখন জাগরণ করবে তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। কোন ব্যক্তি ঘুমানোর আগে এই দুই আয়াত পড়লে, তাদের গোটা রাতে নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে।

আল্লাহর রাসূল (স) এরশাদ বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ে তবে এতেই তার জন্য যথেষ্ট হবে। সুরা মুলক করার সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল বলেছেন, কোরআনের কোরআনের মধ্যে ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরা মুলক না করে আল্লাহর রাসূল কখনোই ঘুমাতেন না। আল্লাহর রাসূল কসম করে বলেছেন, সুরা ফাতেহার দৃষ্টান্ত কোন আসমানী কিতাবে আর নেই।

আরো পড়ুনঃ সুরা মুলক এর ফজিলত সম্পর্কে জানুন

হযরত আবু হুরায়ার (র) থেকে বর্ণিত, যে আল্লাহর রাসূল (স) বলেছেন, সুরা ফাতেহা সমস্ত রোগের ঔষধ। ঘুমানোর সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল। ঘুমানোর সময় পাট বিছানায় শুয়ে অজু করে, ঘুমানোর সময় পাক বিছানায় শুয়ে অজু করে, ডান হাত মাথার উপরে রেখে ১১ বার দুরুদে ইব্রাহিম ও তিনবার সুরা ফাতেহা  ও তিনবার সূরা ইখলাস এবং তিনবার আয়াতুল কুরসি, শেষে আবারো ১১ বার দুরুদে ইব্রাহীম পড়ে বুকের মাঝখানে ফু দিবেন, আপনার মনের আশা পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।

যে আমলটা করে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পরিবারের সদস্যকে ফু দিলে তাদেরকে আল্লাহ হেফাজতে রাখবে। ইনশাআল্লাহ। তাই আসুন রাতের বেলা ঘুমানোর সময় আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ আমল করে ফজিলাতের হক বেড়ে যায়।

শেষ কথাঃ ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয় - রাতে ঘুমানোর দোয়া

আজকের আলোচ্য বিষয় ছিল ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়লে কি হয় এবং রাতে ঘুমানোর দোয়া বিষয় সম্পর্কে। এ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যেই আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি আশাকরি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে এবং ফ্রেন্ড এন্ড ফ্যামিলির সঙ্গে শেয়ার করে তাদের জানার সুযোগ করে দিন। যাতে করে এ আমল নামায় নিজের ফজিলত অর্জন করতে পারে।

এ বিষয়ে আপনাদের কোন মতামত থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হয়। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রেদওয়ান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url