রিজিক বৃদ্ধির আমল - যেসব আমলে রিজিক বৃদ্ধি পায়
আজকের আলোচনার বিষয় রিযিক ভিত্তির আমল এবং যেসব আমলের রিজিক বৃদ্ধি পায় সেগুলো আপনাদের মাঝে তুলে হয়েছে। অনেক মানুষ আছে যে কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কিন্তু ছোট ছোট এই আমলগুলো করতে তারা ভুলে যায়। তবে আমাদের সবাইকে ভাবা দরকার আল্লাহকে ছাড়া আমরা কোন কাজে সফলতা আনতে পারব না।
পোস্ট সূচিপত্রঃসুতরাং আমরা যেই গরমে থাকি না কেন সেই কর্মের মাঝেই আমাদেরকে সময় বের করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং তার সাথে এই ছোট আমলগুলো করতে হবে। এই আমলগুলো আপনারা কাজের মধ্যেও করতে পারবেন। কাজের সাথে দোয়া এবং আমল করা এটা নবীর আদর্শ। তাই চলুন জেনে নেয়া যায় রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং যেসব আমলের রিজিক বৃদ্ধি পায়।
রিজিক বৃদ্ধির হাদিস
রিজিকের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে স্বাস্থ্য, সম্পদ, খাদ্য, বৃদ্ধি, উপায়, উপকরণ
সময় এমনকি আমাদের জীবনটাও রিজিক। এই সব কিছু আল্লাহ তা'আলা আমাদের কে দিয়েছেন।
মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে আল্লাহ হলেন আর রযযক্ব তথা রিজিকদাতা।
আমাদের যা কিছু বিদ্যমান সবই আল্লাহর সুবহানু ওয়া তাআলার দান। মুমিন হিসেবে
আমাদের নিয়ত থাকবে অধিক রিজিক অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা।
পরিবারের দেখাশোনা করা অপরকে সাহায্য করা এবং জান্নাত অর্জন করা। কুরআন কারীমে
রিজিক বৃদ্ধির জন্য কিছু উপায় আলোচনা করা হয়েছে। রিজিক বৃদ্ধির প্রথম উপায় হল
তাকওয়া। তাকওয়া অর্জনকারীদের জন্য রাব্বুল আলামিন রিজিকের পথ সহজ করে দেন।
যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোন না কোন পথ
বের করে দিবেন।
এবং তাকে রিজিক দিবেন এমন উৎস থেকে যা শেখ ধারণাও করতে পারেনি। এটা আল্লাহর
ওয়াদা এবং আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যই সত্য। আমাদের জন্য পালনীয় হচ্ছে রিজিকের
ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করা এবং বিপদ ও পরীক্ষার মুহূর্তে তাকওয়ার উপর অবিচল
থাকা। তাকওয়াই সাফল্যের চাবিকাঠি। রিজিক বৃদ্ধির দ্বিতীয় উপায় হল আল্লাহ
রাব্বুল আলামিনের প্রতি তাকাওয়াক্কুল করা।
আরো পড়ুনঃ ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনি যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ
করবেন। আল্লাহ সব কিছুর জন্য একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। আয়াতের প্রথম অংশ
তাকওয়ার কথা বলে দ্বিতীয় অংশ তাওয়াক্কুলের কথা বলে। তাওয়াক্কুল করার অর্থ হলো
আমাদের যা প্রাপ্য তা আল্লাহ আমাদের দিবে নিয়ে সেই দৃঢ় বিশ্বাস অন্তরে ধারণা
করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাওয়া। রিজিকের তালা খোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার
এই তাওয়াক্কুল।
তৃতীয় উপায় আল্লাহর পথে ব্যয় করা অর্থাৎ দান-সাদকাহ করা। কে আছে যে আল্লাহকে
উত্তম ঋণ দেবে হলে তিনি তার জন্য বহুগুনে বাড়িয়ে দিবেন। আমরা দান সাদকাহ করব
গরিব ও অভাবীদের সাহায্য করার নিয়তে। নিয়তের বিশুদ্ধতা ও দানের মানের ভিত্তিতে
সওয়াব দশ থেকে বহু গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধ পায়। যেসব দ্বীনদার মুসলিম প্রচুর ভিজিট
লাভ করেন তাদের বৈশিষ্ট্য হলো দানশীলতা।
তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বনে পাশাপাশি যারা দান সদকা করেন তাদের রিজিকের
পরিমাণ হয় কল্পনাতীত। যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর তবে আমি অবশ্যই তোমাদের
বাড়িয়ে দিবো। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন। রিজিক
বৃদ্ধির চতুর্থ আমল হল আল্লাহ আমাদেরকে যা দিয়েছেন তা যত কমই মনে হোক না কেন তার
ব্যাপারে কৃতজ্ঞ হওয়া।
সাধারণ নিয়ম হলো শুক্রিয়া আদায় করলে বৃদ্ধি পায় আর অভিযোগ করলে হ্রাস পায়।
আল্লাহ আমাদেরকে যা যা দিয়েছেন তার দিকে তাকানো আর প্রতিটা জিনিসের জন্য
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এবং কৃতজ্ঞতাকে আমাদের জীবনের অংশ বানিয়ে নিয়ে পথ
চলা। ইস্তেগফার হলো পঞ্চম তম উপায়। অতঃপর বলেছি তোমরা তোমাদের পালনকর্তার
ক্ষমা প্রার্থনা করো তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।
তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তনি বাড়িয়ে দিবেন। তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী নালা প্রবাহিত করবেন। আয়াতগুলোতে বৃষ্টি ধন-সম্পদ সন্তান উদ্যান ও নদীকে রিজিক বলা হয়েছে। তাই প্রতিনিয়ত অজস্রবার আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া উচিত, কেননা ইস্তেগফারের হলে রিজিক বারাকাহ আসে।
রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, যে কামনা করে যে তার রিজিক বৃদ্ধি পাক এবং জীবন
দীর্ঘায়িত হোক, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে। রিজিক বৃদ্ধির সর্বশেষ
আমল হল পারিবারিক বন্ধন রক্ষা করা। একজন মুসলিম কখনো পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করে
যে যার পথে চলে যেতে পারে না। পারিবারিক বন্ধন রক্ষায় সচেষ্ট হলে আল্লাহ আমাদের
রিজিক ও হায়াতে বারাকাহ দান করবেন।
দুনিয়া হল আসল গন্তব্য জান্নাতে পৌঁছানোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি হল আসল কথা।
রিজিক বেশি পেয়ে কোন লাভ হবে না যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খরচ না করা হয়।
শরম রাখতে হবে যে অধিক রিজিকের সাথে আসে অধিক জবাবদিহিতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
আমাদের পথ সহজ করুন। আমিন
রিজিক বৃদ্ধির আমল
এর আলোচ্য বিষয় রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং যেসব আমলে রিজিক বৃদ্ধি পায়। এখন জানবো
রিজিকের জন্য কোন সূরা পড়তে হয়। হযরত আলী (র) আনহু বলেন, তোমরা আলোতে
নিজের তালাশ করো, আর রাতের আঁধারে তালাশ করো যে তোমাকে রিজিক দেয়। মহান রাব্বুল
আলামিন পবিত্র কুরআনে এরশাদ বলেন, আল্লাহু লাতিফু ইয়াবাদেহি ইয়া
রাসুলুহুমাইয়াসা ওমল ক্ব্যায়িই আজিজ। যার অর্থ, আল্লাহ তায়ালা নিজের বান্দাদের
প্রতি মেহেরবান, তিনি যাকে ইচ্ছে তাকে রিযিক দান করেন। তিনি প্রবল
পরাক্রমশালী।
যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে একনিষ্ঠতার সঙ্গে ৭০ বার এই আয়াত পাঠ করবে
আল্লাহতালা তাকে সব সময় রিযিকের সংকট থেকে হেফাজতে রাখবে। আমলটি খুবই সহজ এবং
আমরা চেষ্টা করলে এই আমলটি প্রতিদিন নিয়মিত করতে পারি।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাউসুদ (র) আনহু বলেন, রাসুল (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াকিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো তার স্পর্শ করবে না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাউসুদ (র) আনহু তার মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে সূরা ওয়াকিয়াহ তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন।
আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে কি হয়
অন্য এক হাদীসে আছে সূরা ওয়াকিয়াহ হল ধনাঢ্যতার সূরা। সুতরাং তোমরা নিজেরাও তা পড়ো এবং তোমাদের সন্তানদেরকেও তা শিক্ষা দাও। যারা এই সূরাটি তেলাওয়াত করতে পারেন তারা অবশ্যই এ আমলটি করবেন। এই আমলটির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষিত আমল। আমরা সকলেই চেষ্টা করি এই সূরাটি যেন মাগরিবের পর তেলাওয়াত করতে পারে।
উপার্জন বৃদ্ধির দোয়া
আজকের আলোচ্য বিষয় উপার্জন বৃদ্ধির দোয়া। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের অর্থনীতিভাবে এগোতে চাই স্বাবলম্বী হতে চাই। এর জন্য নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করা এবং আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থী করা। কাজের সাথে সাথে দোয়া দোয়ার সাথে সাথে কাজ এটাই হলো নবী রাসুলের আদর্শ। এ দোয়াটি আপনারা প্রত্যেক নামাজের সালাম ফেরানোর পর পরবেন
দোয়াঃ আল্লাহুম্মা ওবসুদ আলাইনা মিন বারাকাতি ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া
ফাদলিকা ওয়া রিযক্বিকা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকান নাইমাল মুক্বিমাল লাযী
লা ইয়াহূলু ওয়া লা ইয়াযুলু।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের উপর তোমার রহমত বরকত অনুগ্রহ ও রিজিক প্রশস্ত করে দাও। হে আল্লাহ নিশ্চয়ই আমি তোমার কাছে এমন স্থায়ী নিয়ামত অনুগ্রহ চাই যা কখনো শেষ হবে না ও দূরে হবে না।
প্রতিটি মানুষই কর্মজীবন নিয়ে এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে আল্লাহকে ডাকার সময় পায় না। অনেক মানুষ রুজির অভাবে পেরেশানিতে ভোগেন। তাই আপনার কর্ম জীবন নিয়ে আপনি ব্যস্ত থাকুন কিন্তু সেই কাজের ফাঁকে অবশ্যই নামাজ পড়ে আল্লাহকে স্মরণ করা অবশ্যক। নামাজ পড়ে এই দোয়া করবেন ইনশাল্লাহ রুজির উপার্জন বৃদ্ধির অভাব হবে না।
জ্ঞান রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
আজকের আলোচ্য বিষয় রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং যেসব আমলের রিজিক বৃদ্ধি পায়। এখন
আমরা জানাবো আপনাদেরকে জ্ঞান রিযিক বৃদ্ধির দোয়া। আমাদের অনেকের মধ্যেই স্মরণ
শক্তি কম থাকে। অনেক কিছু মনে রাখি আবার অনেক সময় দেখা যায় যে ভুলে যায়। যদি
আমরা জ্ঞান রিজিক বৃদ্ধির দোয়া নিয়ে এর ওপর আমল করতে পারি তাহলে আমাদের জ্ঞান
বৃদ্ধি হবে। ইনশাল্লাহ
জ্ঞান রিযিক বৃদ্ধির দোয়াঃ
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান না-ফি-আ ওয়া রিযক্বন ত্বইয়্যিবা ওয়া আমালামঁ
মুতাক্বব্বালা।
অর্থঃ
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিজিক এবং কবুলযোগ্য আমল
প্রার্থনা করি।
শেষ কথাঃ রিজিক বৃদ্ধির আমল - যেসব আমলে রিজিক বৃদ্ধি পায়
প্রিয় পাঠক, আজকের আলোচনার বিষয়ে ছিল রিজিক বৃদ্ধির আমল এবং যেসব আমলে
রিজিক বৃদ্ধি পায় এই সম্পর্কে। এই বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করে এসেছি।
আশা করি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে এবং ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলির মাঝে
শেয়ার করে তাদের জানার সুযোগ করে দিন।
এ বিষয়ে আপনাদের কোন মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন এবং আমাদের
ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখতে পারেন। কারণ
আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
রেদওয়ান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url