কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা - সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতাআমরা সকলেই জানি কিসমিস রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ সেমাই, পায়েস মিষ্টি জাতীয় খাবারের ব্যবহার হয়ে থাকে এমনকি পোলাও রান্না করলে পোলাও এ ব্যবহার হয়ে থাকে। তাছাড়া কিসমিস সাধারণত কেউ খায়না। একে কিন্তু বলা হয়ে থাকে শুকঅনো ফলের রাজা। কিন্তু আমাদের মাঝে অজানা রয়েছে যে শরীরের কি কি উপকারে আসে এই কিসমিস।
পোস্ট সূচিপত্রঃতাই আজকে আপনাদের জানাবো কিসমিস ভিজে খাওয়ার উপকারিতা এবং সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এতদিন আপনারা জানেন কিসমিস রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই আজকের এই বিষয়টি জেনে আপনারা প্রতিদিন কিসমিস খাওয়া শুরু করবে যাতে করে আপনাদের শরীর সুস্থ থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যায় খাওয়ার উপকারিতা
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
অনেকেই জানেন না কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা। তাই আজকে আপনাদের জানাবো
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া উপকারিতা এবং কিসমিস ভিজিয়ে রাখা সেই পানি খেলে আমাদের
কতটা উপকার হয় এই বিষয়ে। কিসমিস আমাদের রক্তস্বল্পতায় যে কাজ দেয় সেটা অনেকেই
জানে। তবে এটা জানেন কি চকরেত এবং লিভারেও এটা কাজ করে। কিসমিস ভেজানো পানি যদি
রোজ পান করেন তাহলে আমাদের লিভার ভালো থাকে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এক গবেষণায় দেখা গেছে কিসমিস ভেজানো পানি যদি আমরা রোজ খেতে পারি। তাহলে আমাদের
শরীরে জৈবরাসানিক প্রক্রিয়া ভালোভাবে কাজ করে। লিভারে জৈবরাসানিক
তাড়াতাড়ি হয় এর ফলে রক্ত দ্রুত পরিশোধন হয়। আমরা যদি টানা চার দিন পর পর যদি
পানিটা খেতে পারি তাহলে আমাদের পেট ভীষণভাবে পরিষ্কার হবে। আজকাল ডাক্তাররাও অনেক
সময় কিসমিস খাওয়ার কথা বলে। কিসমিস কিন্তু হার্ট কে ভালো রাখে।
এছাড়াও আমাদের শরীরে যে খারাপ কোলেস্টরেল থাকে সেটাকে দূর করতে সহায়তা
করে। কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেলস থাকে তাই আমাদের শরীরের
পক্ষে ভীষণ ভালো। কিডনি এবং লিভারে খুব ভালো কাজ করে। কিসমিস ভেজানো পানি এই
কারণে খাওয়া হয় যাতে কিসমিসের মধ্যে যে শর্করা থাকে সেই শর্করা কিছুটা পরিবার
কম হয়।
প্রতিদিন কয়টি কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া উচিত
যারা কিসমিস ভিজিয়ে খেতে চায় তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি। কারণ এখানে
জানানো হবে প্রতিদিন কয়টি কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া উচিত। দুই কাপ পানি নিবেন মানে
৪০০ এমএল এবং তার সঙ্গে ১৫০ গ্রাম কিসমিস মেশাবেন।
একটা যদি সমস্যা হয় খেয়াল করবেন বাজার থেকে যখন কিসমিস কিনবেন তখন দেখে
নেবেন।খুব চকচকে কিসমিস কিনবেন কারণ ওর মধ্যে কিছু কেমিক্যাল মেশানো থাকে। একটু গারো
রং এর কিসমিস কিবেন।আর খেয়াল রাখতে হবে কিসমিস টা যেন খুব মোটা হয় না এবং পাতলা ও যেন না হয়।
তাই বুঝে শুনে কিসমিস কিনবেন।
সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
অনেকে জানতে চেয়েছেন সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম। তাই আজকে আপনাদের
সাথে আলোচনা করব সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এর মধ্যে আমরা
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করে এসেছি। এখন আপনাদের
জানাবো সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম এই বিষয়ে।
ভেজানোর আগে কিসমিস ভালো করে ধুয়ে নেবেন এরপর কিসমিস ভেজাবেন।সারারাত ভেজানো থাকলো এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে কিসমিস টাকে ছেঁকে নেবেন। ছেঁকে
নেওয়ার পরে যে পানিটা বের হবে সেই পানিটা হালকা গরম করে নিবেন। তারপর পানিটাকে
খেয়ে নেবেন। আর অবশ্যই খেয়াল রাখবে এই কিসমিস ভেজানো পানি খেলে কমপক্ষে আধা
ঘন্টা পরে খাবার খাবেন।
শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়
আঙুর ফলের শুকনা রূপ হলো কিসমিস। সোনালী-বাদামী রংয়ের চুপসানো ভাঁজ হওয়া ফলটি
খুবই শক্তিদায়ক। এটি তৈরি করা হয় সূর্যের তাপ অথবা মাইক্রোওয়েভ ওভেনের
সাহায্যে। তাপে ফ্রুক্টোজগুলো জমাট বেঁধে পরিণত হয় কিসমিসে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে রয়েছে ২৯৯ কিলোক্যালরি শক্তি, কার্বোহাইড্রেট ৭৯.১৮
গ্রাম, প্রোটিন ৩.০৭ গ্রাম, ফ্যাট ০.৪৬ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ৩.০৭ গ্রাম, ফোলেট ৫
মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন ০.৭৬৬ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৭৪৯
মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.৮৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৯৯
মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১০১ মিলিগ্রাম।
কিসমিস রক্তে শর্করার মাত্রায় ঝামেলা তৈরি করে না। এটি খেলে শরীরে রক্ত দ্রুত
বৃদ্ধি পায়, পিত্ত ও বায়ুর সমস্যা দূর হয়। এটি হৃদপিণ্ডের জন্যও অনেক উপকারি।
এখন বিস্তারিতভাবে জেনে নিন শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়। আপনাদের বোঝার
সুবিধার্থে নিচে উল্লেখ করা হলো শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় এই বিষয়ে।
দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায়ঃ শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে কিসমিসের অবদান অনেক বেশি।
কিসমিসে রয়েছে চিনি, গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ, যা তাৎক্ষণিকভাবে দেহে এনার্জি
সরবরাহ করে থাকে। তাই দুর্বলতা দূরীকরণে কিসমিসের কোন জুড়ি নেই।
রক্তশূন্যতা দূর করেঃ কিসমিসে আছে প্রচুর পরিমাণে লৌহ উপাদান। যা রক্তশূন্যতা
দূর করতে সাহায্য করে। রক্তশূন্যতার কারণে অবসাদ, শারীরিক দুর্বলতা বা রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যতে পারে এমনকি, বিষণ্ণতাও দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে
কিসমিস যথেষ্ট উপকারী।
হজমে সাহায্য করেঃ কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা দেহের
পরিপাকক্রিয়া দ্রুত হতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
হাড়ের সুরক্ষা দেয়ঃ এই শুকনো ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। যা হাড়
মজবুত করতে বেশ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস হাড়ের ক্ষয়
এবং বাতের ব্যথা থেকে দূরে রাখবে। তাছাড়া কিসমিসে আছে প্রচুর পরিমাণ বোরন, যা
অস্টিওপরোসিস রোগের প্রতিরোধক।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম রক্তের চাপ কমাতে সাহায্য
করে। শরীরে থাকা উচ্চমাত্রার সোডিয়াম, রক্তচাপ বাড়ার প্রধান কারণ। কিসমিস
শরীরের সোডিয়াম মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
চোখের জন্য উপকারিঃ কিসমিস চোখের জন্য যথেষ্ট উপকারি। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ
এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। তাছাড়া কিসমিস খেলে সহজে শরীরে
বয়সের ছাপ পড়ে না। দৃষ্টি শক্তি হ্রাস ও চোখে ছানি পড়া থেকে দূরে রাখে।
আরো পড়ুনঃ দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
ক্যান্সার প্রতিরোধে করেঃ খাবারে প্রচুর পরিমাণ আঁশ থাকলে কোলোরেক্টারাল
ক্যান্সার ঝুঁকি কমে যায়। এক টেবিল চামচ কিসমিসে ১ গ্রাম পরিমাণ আঁশ থাকে।
কিসমিসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিক্যাল ড্যামেজের
হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের কোষ উৎপন্ন হওয়ায় বাধা প্রদান করে।
এসিডিটি কমাতে সহায়তা করেঃ রক্তে অধিক মাত্রায় এসিডিটি (অম্লতা) বা
টক্সিসিটি (বিষ উপাদান) থাকলে তাকে বলা হয় এসিডোসিস। এসিডোসিসের (রক্তে
অম্লাধিক্য) কারণে বাত, চর্মরোগ, হৃদরোগ ও ক্যান্সার হতে পারে। কিসমিস রক্তের
এসিডিটি কমায়।
কোলেস্ট্রোরেল হ্রাস করেঃ কিসমিসে কোন কোলেস্ট্রোরেল থাকে না এমনকি এতে আছে
এন্টি-কোলোস্ট্রোরেল উপাদান। যা রক্তের খারাপ কোলোস্ট্রোরেলকে হ্রাস করতে
সাহায্য করে। এছাড়া কিসমিসের দ্রবণীয় ফাইবার, যা লিভার থেকে কোলোস্ট্রোরেল
দূর করতে সাহায্য করে।
ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায়ঃ কিসমিসের মধ্যে রয়েছে পলিফেনলস এবং
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফেমেটরি উপাদান। যা কাঁটা-ছেড়া বা ক্ষত
হতে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি অধিকাংশে কমিয়ে দেয়।
ওজন বাড়াতে সাহায্য করেঃ কিসমিসে প্রচুর ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকে। তাই এটি
ওজন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যদি সঠিক নিয়মে ওজন বাড়াতে চান তবে আজই
কিসমিস খেতে পারেন।
এমনকি কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। যা দাঁত মজবুত করতে বেশ
কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা মানুষের অনিদ্রার
সমস্যা দূর করতে সহায়ক। কিসমিসে থাকা বোরন মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারি, এই
শুকনো ফলটি খেলে কাজে মনোযোগ বাড়ে। তাই আপনাদের খাদ্য তালিকায় আজকেই কিসমিস
যোগ করুন।
রেদওয়ান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url