টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না - টনসিল ফোলা কমানোর উপায়

শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে নাটনসিল ছোট বড় প্রায় সব ধরনের মানুষের হয়ে থাকে। এটি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে মারাত্নক আকার ধারন করে থাকে। অনেকেই জানেন না টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না তাই আজকের আলোচনায় রয়েছে টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না এবং টনসিল ফোলা কমানোর উপায়।

টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না

পোস্ট সূচিপত্রঃটনসিল সম্পর্কে সবাই জানলেও বিস্তারিতভাবে ভালো করে কেউ জানেন না। টনসিল হলে কেউ অনিহা করবেন না এর সঠিক চিকিৎসা করুন এবং এর ব্যাপারে সঠিক ধারণা গুলো নেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনাদের  বোঝার সুবিধার্থে নিচে দেওয়া হল।

টনসিল কি

শীতের সময় গলায় বেশ কিছু প্রবলেম দেখা দেয় অনেক সময় বেশি এই সমস্যা দেখা দেয় বাচ্চাদের যেটাকে বলা হয় টনসিল। টনসিল হলো আমাদের গলার দুই পাশে দুটি লিফয়টিশণ বা চাকা। এরকম লিফয়টিশণ প্রায় সকল মানুষের থাকে। সাধারণত দুই পাশে যে লিফয়টিশণ আছে টনসিল বা প্লাটাই টনসিল বলে থাকি। শীতকালে বা অন্য কোন যে সময় এই টনসিলের সমস্যা বাচ্চাদের বেশি দেখা দেয়।

এজন্য শীত আসার আগে থেকে নিজের আর বাচ্চাদের টনসিলের হাত থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবেন। কারণ টনসিল হলে বেশি বাচ্চাদের কিছু কিছু সমস্যা হয় যেমন বাচ্চার গলায় ব্যথা করবে, বাচ্চার জ্বর আসবে, বাচ্চার খেতে সমস্যা হবে, অনেক সময় গলার কন্ঠ চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে। এই সমস্যা হলে আতঙ্কিত হবেন না। বাড়িতে আপনি পরিমাণ মতো লবণ আর পানি নিয়ে গরম করে হালকা ওষুধ গরম পানিতে গলার গড়গড়ি করলে সেরে যাবে।

এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এর পাশাপাশি ওষুধ খেলে দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে বেশি আইসক্রিম খাওয়া যাবেনা ফ্রিজের কোন ঠান্ডা জিনিস খাওয়া যাবে না। অনেক সময় ধরে গোসল করা যাবে না। আর বাচ্চাকে বিশেষ করে সকালে বিকালে আর রাত্রে গরম কাপড় পরানোর চেষ্টা করবেন। তারপরেও যদি টনসিল হয়ে যায় তাহলে আপনার নিকটবর্তী ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে সঠিক সময় টনসিল সারিয়ে তুলতে পারবেন।

টনসিল হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি

এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব টনসিল হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি এই বিষয়ে।টনসিল ছোট-বড় সকলেরই কম বেশি হয়ে থাকে। টনসিল এর প্রধান লক্ষণ হচ্ছে টনসিল ফুলে যাওয়া। কখনো কখনো মুখে শ্বাস পর্যন্ত নেওয়া কষ্ট হয়ে যাই।

টনসিলাইটিসের অন্যান্য লক্ষণ ও উপসর্গর মধ্যে সবথেকে কমন লক্ষণ হচ্ছে গলা ব্যথা করা, শরীরে জ্বর জ্বর ভাব বা জ্বর হওয়া, টনসিল লাল হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া। টনসিলের উপরে সাদা অথবা হলদে আবরণ পড়ে যাওয়া মাথাব্যথা বা কান ব্যথা বা উভয় অঙ্গে ব্যথা হওয়া।

আরো পড়ুনঃ হার্নিয়া থেকে মুক্তির উপায়

ক্ষুধা না হওয়া অথবা ক্ষুধা মন্দা হওয়া। কিছু খাবার সময়ে বা এমনি ঢোক গলার সময় ব্যথা লাগা। ঠান্ডা না লাগলেও সর্দি হওয়া, শ্বাস প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ বের হওয়া। গলা ভাঙ্গা, কণ্ঠ চেঞ্জ আসা, এমনকি ভয়েস  ওস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে।

টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না

যাদের টনসিলের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আজকের এই আলোচনায় রয়েছে টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবেনা।

১. প্রথমে আপনার যেটি খাওয়া যাবেনা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না। এই ঠান্ডা পানির কোন উপকার করে না বরং মারাত্মক ক্ষতি করে টনসিলের সমস্যা প্রধান কারণ হচ্ছে এই ঠান্ডা পানি। অবশ্যই ঠান্ডা পানি খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।

২. ডেজার্ট অনেকেরই পছন্দ ফ্রিজ থেকে বের করে খেয়ে ফেলেন। তাই ঠাণ্ডা ডেজার্ট খাওয়া যাবেনা টনসিল হলে। ফ্রিজ থেকে ডেজার্ট বের করে কিছুক্ষণ রেখে দেবেন রুম টেম্পারেচার এর মাত্রায় আসলে তখন খাবেন।

৩. আইসক্রিম কোনভাবে খাওয়া যাবেনা টনসিল হলে। আইসক্রিম বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি দয়া করে টনসিলের সমস্যা আরো বুদ্ধি করে তোলে এজন্য আইসক্রিম খাওয়া যাবেনা।

৪. আরেকটি সমস্যা হচ্ছে কোল্ড ড্রিংক আমরা কিন্তু বিভিন্ন টনসিলের সমস্যা থাকলে অবশ্যই কোল্ড ড্রিংক খাওয়া যাবেনা।

৫.ধূমপান করলে টনসিলের সমস্যা বেশি হয় অনেকের এই বিষয়ে জানেন না ধূমপান করলে টনসিলের সমস্যা আরো বেশি হতে পারে। তাই ধূমপানটা অনেক ক্ষতিকর এজন্য ধূমপান থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।

আরো পড়ুনঃ পা ফাটা থেকে মুক্তির উপায়

৬. ঝাল মসলাযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া যাবেনা ঝাল মশলাযুক্ত খাবার খেলে টনসিলের জায়গায় জ্বালা করে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা।

৭. চিপস চানাচুর ফুচকা, জাঙ্ক ফুড খাওয়া যাবেনা। যেকোনো টক খাবার গলা ব্যথা অনেক গুন বাড়িয়ে দিতে পারে তাই টনসিলের ব্যথা কমাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং টক খাবার খাওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরতি থাকতে হবে।

৮. বাঁধাকপি ফুলকপি ব্রকলি এবং ছোলা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা কারণ এই খাবারগুলো টনসিলের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। মুলা মিষ্টি আলু চিনা বাদাম না খাওয়া অতি উত্তম।

৯. দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা। চিনি রান্না করা গাজর পাকা কলা শুকনো ফল ময়দার রুটি আলু এবং মিষ্টি এগুলো কম পরিমাণে খান কারণ এগুলো শরীরে কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।

এছাড়াও হজমের সমস্যা হয় এ ধরনের খাবার খাওয়া যাবেনা। যতটা সম্ভব বিধি-নিষেধ মেনে চলতে পারলে একজন ব্যক্তির টনসিল সমস্যা কমতে কোন সময় লাগবে।

টনসিল হলে কি কি খেতে হবে

  • এখন আপনাদের জানাবো টনসিল হলে কি কি খেতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক তফসিল হলে কি কি খেতে হবে-
  • টনসিল হলে আপনি মধু খেতে পারেন কারণ মধু ব্যাকটেরিয়াল এবং ভাইরাস সংক্রান্ত প্রতিরোধে অনেক কার্যকর। তবে দুই বছরের নিচে শিশুদের মধু খাওয়াবেন না।
  • দই খেতে পারবেন কারণ  দইতে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট এবং হেলদি ফ্যাট থাকে।
  • ডিম খেতে হবে কারণ ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি ভিটামিন বি১২ জিংক আইরুল সেলেনিয়াম ও আরো নানা পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা টনসিল এর সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
  • আদা খেতে হবে কারণ আদাতে রয়েছে এনটিঅক্সিডেন্ট ও ইনফ্লুয়মেটরি গুণ রয়েছে যা ব্যথা ও সংক্রমণ করতে অত্যন্ত ভূমিকা রাখে।অসুস্থ হলে যেমন খাবারের কোন রুচি থাকে না তেমন টনসিল হলে খাবারের অনিহা চলে আসে।
  • তাই যতটা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। টনসিলাইটিস্ট হলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার খেতে হবে বেশি। শরীরকে হাইড্রেট পণ্য রাখতে বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে।ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত খাবার টনসিলাইটিস্ট বা টনসিল কমাতে অত্যন্ত সাহায্য করে।

টনসিল ফোলা কমানোর উপায়

অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগলে টনসিল অনেক মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এটাই স্বাভাবিক। টনসিল হলে আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা হলো আমরা কোন খাবার খেতে পারি না ঢোক গিলতে পারি না। এজন্য আপনারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এর পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু টোটকা আপনাদের সাথে আজকে শেয়ার করবো।

সেগুলো যদি আপনারা শীতকালে মেনে চললে তাহলে আপনারা টনসিলের হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন। ডাক্তারের কাছে আর যাওয়া লাগতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক টনসিল ফোলা কমানোর উপায়।

লেবু ও মধুরঃ  খুব সহজে আপনি ঘরে বসেই একটি লেব ও একটু মধু দিয়ে আপনার টনসিলের ফোলা কমাতে পারবেন। প্রথমে এক গ্লাস উষ্ণ পানি নিতে হবে। গোটা একটা পাতি লেবুর রস , এক চামচ মধু সাথে একটু নুন নিয়ে ভালো করে মিশাতে হবে। দিনে ৪ থেকে ৫ বার ব্যবহার করুন ।

হলুদ ও দুধঃ এক কাপ গরম দুধের সাথে সামান্য পরিমাণ হলুদ ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। হলুদে রয়েছে এক প্রকার অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও এন্টি এক্সিডেন্ট। যা গলা ব্যথা ও টনসিলের ফোলার সমস্যা দূর করতে এটি ভালো কাজ করে। তাই যাদের টনসিল আছে তারা খুব সহজে বাড়িতে বসে এই কাজটি করে ব্যবহার করতে পারেন।

লবণের ব্যবহারঃ একটি গ্লাসে গরম পানি নিতে হবে এবং তার সাথে হালকা পরিমাণ লবণ দিতে হবে। ধীরে ধীরে গরম পানির ভাপ দিতে হবে টনসিলে। এই ভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভাপ দিতে হবে। দেখবে খুব সহজেই আপনার টনসিলের ফোলা কমে গেছে।
আরো পড়ুনঃ কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
আদা ব্যবহারঃ আদা দিয়ে সুন্দর করে লাল চা বানিয়ে খেতে হবে। এই আ্দা টনসিল ফোলা কমাতে দারুন কাজ করে। দেড় কাপ পানিতে এক চামচ আদা কুচি আর আন্দাজ মত চা পাতা দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে বানিয়ে ফেলুন টনসিলের এক মহা ঔষধ। এটি চা দিনে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ বার পান করতে হবে ।

নারকেল তেলঃ দুই টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল গরম করে নিন। এতে কিছু লেবুর রস দিয়ে দিন। তারপরে চার ভাগের এক কাপ কাঁচা মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। এক কাপ গরম পানিতে এই সিরাপ এর এক চামচ মিশিয়ে পান করুন। দিনে দুই থেকে চার বার এই পানি পান করুন আর নিজেই দেখুন এর ফলাফল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রেদওয়ান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url