ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম - চিয়া সিড উপকারিতা
মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা জানুনচিয়া সিড সম্পর্কে অনেকেই কম বেশি শুনেছেন। শরীর ভালো রাখতে চিয়া সিডের গুরুত্ব অপরিসীম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চিয়া সিডের অনেক কার্যকারিতা ভূমিকা রয়েছে। অনেকেই চিয়া সিড উপকারিতা এবং ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম গুলো ভালো করে জানেন না। তাই অনেকে চিয়া সিড খাওয়া নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ করেন না।
পোস্ট সূচিপত্রঃযারা চিয়া সিড খেতে চান এবং যারা দ্রুত ওজন কমাতে অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া সিড গ্রহণ করলে হতে পারে শারীরিক কিছু অসুবিধা। কোন কিছুই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। শরীর স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তাই আজকে আপনাদের জানাবো ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম এবং চিয়া সিড উপকারিতা এই বিষয়ে।
চিয়া সিড কি
চিয়া সিড বা চির বীজ মরুভূমিতে জন্মানো সালফিয়া ইস্পানিকা উদ্ভিদের বীজ। এই অতি উপকারিতা বীজটি আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকা এবং সেখানকার প্রাচীন আদিবাসী অ্যাজটেক জাতের খাদ্য তালিকায় এবিট অন্তর্ভুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রচীন মায়া এবং অ্যাজটেক জাতের মানুষ চিয়া সিডকে সোনার থেকেও মূল্যবান মনে করত।
তারা বিশ্বাস করতো এটা তাদের শক্তি ও সাহস যোগায়।চিয়া সিড সব ধরনের আবহাওয়াই হয় এবং এতে পোকামাকড় আক্রমণ তেমন হয় না। চিয়া সিড সাদা ও কালো রঙের এবং তিলের মত ছোট সাইজের হয়। চিয়া একটি সুপার সিড নামে পরিচিত।
চিয়া সিড উপকারিতা
চিয়া সিড হল মরুভূমিতে জন্মানোর সালফিয়ায় পানিকা উদ্ভিদের বীজ। চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ক্যালসিয়াম আয়রন পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি পাওয়া যায় তাই একে সুপার ফুট বলা হয়। সুপার ফুড হওয়ার জন্য চিয়া সিডের অনেক উপকারিতা আছে যেমন ওজন কমাতে সাহায্য করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা আছে আপনি যদি নিয়মিত চিয়া সিড খেতে পারেন তাহলে প্রচুর উপকারিতা পাবেন। চিয়া সিডে দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায় যা আমাদের দেহে মেটা ভোলিজেন বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। এর ফলে দেহের ওজন সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চিয়া সিডে মিউসুলেস নামক একটি রাসায়নিক উপাদান থাকে এর জন্য এটি ভেজানোর পর চটচটে একটি আঠালো রূপ ধারণ করে। দেহের বিভাগ গতি কমিয়ে দেয় এর ফলে খিদে কম লাগে।
আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়
এছাড়াও চিয়া সিডের প্রোটিন আমাদের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছে কমিয়ে দেয়। চিয়া সিডে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায় যা আমাদের অন্ত্রের জন্য দারুন উপকারী। অদ্রবনীয় ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং দ্রবণীয় ফাইবার হজমের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও চিয়া সিড আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রীভায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
ভাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা নিয়মিত চিয়া সিড খেলে অবশ্যই উপকারিতা পাবেন। চিয়া সিডে থাকা ফাইবার ও উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রভাবে আমাদের দেহের ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায় এর ফলে রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষ করে যারা টাই টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের জন্য চিয়া সিড বেশ উপকারী। একটি কথা মনে রাখবেন রক্তে শর্করা মাত্রা বেড়ে গেলে আমাদের দেহে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
তাই ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করা খুব প্রয়োজন। এর জন্য আপনি নিয়মিত চিয়া সিড খেতে পারেন এতে অবশ্যই সুফল পাবেন। চিয়া সিডে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ও ফাইবার পাওয়া যায় যা আমাদের হৃদযন্ত্রের জন্য বেশ উপকারী। চিয়া সিডে থাকা ফাইবার এলডিএল নামক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও টাই গ্লিসারাইড এবং অক্সিডেন স্ট্রেট কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।
এক্সপার্টদের মতে চিয়া সিডে বেশি মাত্রায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে আমাদের অবশ্যই চিয়া সিড খাওয়া প্রয়োজন। অ্যানিমিয়া দূর করে আমাদের দেশে অনেক পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যায় ভুগলে নানা রকম অসুখ দেখা দিতে পারে। তাই এই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। চিয়া সিড হল আয়রনের একটি ভালো উৎস আপনি নিয়মিত চিয়া সি্ড খেতে পারেন তাহলে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন।
এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখি পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষের মধ্যে ভিটামিন এ আয়রন ও জিঙ্ক এর অভাব দেখা যায়। তাই সুস্থ থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই চিয়া সিড খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও চিয়া বীজে আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় এবং ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
ঘরে বসে আপনারা খুব দ্রুত ওজন কমাতে পারবেন চিয়া সিড ব্যবহার করে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। চিয়া সিড আমরা কম বেশি সবাই চিনি এটা মোদির দোকানে অথবা যে কোন সুপারশপে পেয়ে যাব। অনেকে আবার চিয়া সিড এবং তোকমা কে একই মনে করে থাকেন কিন্তু না চিয়া সিড আলাদা তোকমা আলাদা।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়মঃ প্রথমে এক গ্লাস নরমাল টেম্পারেচার পানি নিতে হবে। এরপর সেই পানিতে এক চামচ চিয়া সিড ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। মেশানো হয়ে গেলে এটি সারা রাতের জন্য রেখে দিতে হবে। অনেকেই মনে করেন শুধু চিয়া সিড খেলেই ওজন কমবে তা কিন্তু নয়। ওজন কমানোর জন্য প্রোফাইল ডায়েট এর দরকার। তো তার সাথে আপনারা চিয়া সিডটা খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
সারা রাতের পর এটা ফুলে উঠবে ইসবগুলের ভুষির মত আর পরিমাণেও মনে হবে অনেক বেশি। এরপর আপনারা চামচ দিয়ে ভালোভাবে মেরে নিবেন এবং দুই চামচ লেবুর রস মিশিয়ে আবার ভালো করে চামচ দিয়ে মেড়ে নিবেন। এভাবে খেলে একসঙ্গে দুইটা উপকারী পাওয়া গেল চিয়া সিড ও লেবু পানি। আপনারা চাইলে দুধের মধ্যে মিশে ও অল্প কিছু ফলমূল দিয়ে খেতে পারে। তবে পরিমাণ মতো দিতে হবে অতিরিক্ত দিলে এর কাজ করবে না।
চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়
চিয়া সিড বা চিয়া বীজ অনেকে হামরা কম বেশি সবাই চিনি। এখন আপনাদের জানাবো চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়। চিয়া সিড বিশ মিনিট অথবা আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে ফুলে ডাবল হয়ে যায়। এর পরিবার এক এক থেকে দেড় চামচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তখন আপনারা বুঝতে পারবেন ভুলে ডাবল হয়ে গেছে।
অনেকে আবার সারারাতের জন্য ভিজিয়ে রাখতে পারে। যারা ডায়েট করেন এবং ওজন
কমাতে চান সকালে যারা খালি পেটে খেতে চায় তারা রাতে ভিজে রাখবে এবং সকালে খালি
পেটে খাবেন। আর যাদের হাতে সবই কম তারা বিশ মিনিট অথবা আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে
খেতে পারবেন।
চিয়া সিড খেলে কি হয়
চিয়া সিড শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য। প্রতিদিন চিয়া সিড খেলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দূর করে শরীরকে সুস্থ ও সরল রাখতে সাহায্য করে। শারীরিক দুর্বলতা দূর করে শরীরকে সচল রাখে। দুধের সাথে মিশে খেলে শরীরের হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে। চিয়া সিড হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। যাদের শরীরে পুষ্টি কম আছে তারা চিয়া সিড খেলে পরিপূর্ণ পুষ্টি পায় ফলে তাদের শরীর সুস্থ থাকে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়াও এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের নানা ধরনের বর্জ পদার্থ থেকে মুক্ত রাখে। এটি ত্বক এবং চুলের জন্যও উপকারী। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বককে সুন্দর করে তুলে এবং চুল পড়া হ্রাস করে চুলকে ঘন ও লম্বা করতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়ম করে চিয়া সিড খেলে মানুষের স্বাস্থ্যহানি হয় না বরং এটি সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। তাহলে আসুন আমরা চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে গ্রহণ করি।
রেদওয়ান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url