মৃত ব্যক্তির গোসলের পদ্ধতি - মৃত ব্যক্তির গোসলের বর্ণনা
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া যেমনিভাবে ফরজে কিফায়া, মৃত ব্যক্তির গোসলের পদ্ধতি সাথে তেমনি অনেক ফজিলত এবং আখিরাতের সাওয়াব অর্জনের মাধ্যম এবং যে একনিষ্ঠ সাওয়াব পাওয়া যায় অর্জনের জন্য মৃত ব্যক্তির গোসলের পদ্ধতি অনেকেই জানতে চাই দেয। তাই নিজে উল্লেখ করা হলো মৃত ব্যক্তির গোসলের পদ্ধতি।
পোস্ট সূচিপত্রঃমৃত ব্যক্তির গোসলের পদ্ধতি এ নিয়ে অনেকে অনলাইনে সার্চ করে থাকে। অনেকেই আছেন মৃত ব্যক্তির গোসলের পদ্ধতি জেনে পাড়া মহল্লায় সাহায্য করেন নিজেরাই গোসল করিয়ে।অনেক মানুষ মৃত ব্যক্তির গোসলের পদ্ধতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে নিজেরাই মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাতে পারে।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার ফজিলত
হযরত সায়্যিদুনা জাবের হতে বর্ণিত; তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুওয়াত, প্রিয় নবী ইরশাদ কলেন। যে কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিল, সে তার গুনাহ হতে এমন ভাবে পুতঃপবিত্র হয়ে যাবে।যেমনটি সে ঐদিন ছিল, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।
৪০টি কবিরা গুনাহ ক্ষমার ব্যবস্থাপত্র
হাদিসে পাকে বর্ণিত রয়েছে, যে কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিলো এবং তার দোষ ত্রুটিকে গোপন রাখল, আল্লাহ তাআলা এবং ব্যক্তির ৪০ টি কবিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তার যতগুলো কবিরা গুনাহ থাকবে সেগুলো আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করে দেবেন।
মৃত ব্যক্তির গোসলের বিভিন্ন নিয়ত
*আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখিরাতের সওয়াবের জন্য মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিব। * ফরজে কিফায়া আদায় করব। * প্রয়োজনে গোসলের পূর্বে সাহায্যকারীকে গোসলের পদ্ধতি এবং সুন্নত সমূহ জানিয়ে দিব। * মৃত ব্যক্তির সতর ঢাকার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিব। * শরীরের অজ্ঞ নাড়ানোর সময় নম্রতা এবং ধীরে নড়াচড়া করাবো। * পানির অপচয় থেকে বেঁচে থাকবো। * অসহায়ত্ব দেখে শিক্ষা গ্রহণ করার চেষ্টা করব। * সমস্যার সম্মুখীন হলে দারূল ইফতা আহলে সুন্নাত হতে শরয়ী দিক নির্দেশনা অর্জন করব।
* আল্লাহ না করুক মৃত ব্যক্তির যারা কালো হয়ে গেলে বা অন্য কোন পরিবর্তন হয়ে গেলে শরয়ী হুকুম অনুযায়ী তা গোপন রাখবো এবং সাহায্যকারী কেউ গোপন রাখার পরামর্শ দিব। * ভালো নির্দেশন প্রকাশ পেলে যেমন; সুগন্ধ আসা, চেহারায় মুচকি হাসি পরিলক্ষিত হওয়ার ইত্যাদি, তখন তা অপরকেও বলবো।
মৃত ব্যক্তির গোসলের পদ্ধতি
মৃত ব্যক্তি গোসলের পদ্ধতি হলো আগরবাতি বা লোবার জ্বালিয়ে তিন বা পাঁচ অথবা সাতবার গোসলের খাটে ধোঁয়া দিন অর্থাৎ ততবার খাটের চারপাশে ঘুরান খাটের উপর। মৃত ব্যক্তিকে এমনভাবে শোয়ান যেভাবে কবরে শোয়ানো হয়। নাভী থেকে হাঁটু সহ কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখো। (আজকাল গোসলের সময় সাদা কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখা হয়, আর এতে পানি ঢালার ফলে সতর ভেসে উঠে তাই খয়রি বা গাড় রংয়ের এত মোটা কাপড় ব্যবহার করুন যে পানি ঢালার পরও সতর ভেসে না উঠে কাপড়কে ডাবল করে দিলে অতি উত্তম)
সতর্কতার সহিত পর্দার প্রতি সজাগ থেকে ও নম্রভাবে পরিধানের কাপড় খুলে দিন। এবার গোসল প্রদানকারি নিজের হাতে গ্লাভস পড়ে নিন। প্রথমে তাকে উভয়দিকে ইস্তিনজা করান অর্থাৎ পানি দ্বারা শৌচকর্ম করান। এরপর নামাজের মত অজু করা্ন অর্থাৎ মুখমণ্ডল ও কুনয়সহ উভয় হাত তিনবার করে ধৌত করুন মাথা মাসেহ করুন তারপর তিনবার করে উভয় পা ধৌত করুন। মৃত ব্যক্তিকে অজু করানোর সময় প্রথমে হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ার নিয়ম নেই তবে কোন কাপড় বা পুটলি ভিজিয়ে তা দারা দাঁত মাড়ি ঠোঁট ও নাকের ছিদ্র মুছে দিন।
মাথার চুল বা দাড়ি থাকলে তা ধুয়ে দিন সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। মৃত ব্যক্তিকে বাম পাশে কাত করে কুল গাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ করা (পানি হালকা ঠান্ডা হলে) কুল গাছের পাতা না থাকে তাহলে সাধারণ সামান্য গরম পানি মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রবাহিত করুন যেন পানি তক্তা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।এরপর ডান পাশে কাত করে অনুরূপভাবে পানি ঢালুন, তারপর হেলান দিয়ে সাবান এবং ধীরে ধীরে নিচের দিকে পিঠের নিচের অংশে মালিশ করুন এবং পেট হতে কিছু বের হলে তা ধুয়ে ফেলুন।
এমতাবস্থায় পুনরায় অজু ও গোসল করানোর প্রয়োজন নেই, পরিশেষে মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাপড়ের পানি ঢেলে দিন।এরপর কোন পবিত্র কাপড় দ্বারা তার শরীর ধীরে ধীরে মুছে দিন। সমস্ত শরীরে একবার পানি প্রবাহিত করা ফরজ আর তিনবার প্রবাহিত করা সুন্নত, অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত করবেন না, আখিরাতে এক এক বিন্দুর হিসাব দিতে হবে একথা মনে রাখবেন।
মৃত ইসলামী বোনদের গোসলের পদ্ধতি
গোসল ও কাফনের জন্য এই জিনিসগুলো ব্যবস্থা করে নিন; * গোসলের খাট* আগরবাতি* দিয়াশলাই* দুটি মোটা চাদর(খয়রি হলে উত্তম) * তুলা* বড় রুমালের মত দুটি কাপড়ের টুকরো(ইস্তিনজা ইত্যাদির জন্য) * দুটি বালতি* দুটি মগ* সাবান* কুল গাছের পাতা* দুটি তোয়ালে* কাপড়ের কাপড় ব্যতীত সেলাই বিহীন প্রশস্ত কাপড়* কাঁচি* সুই সুতা* কাপড়* সুগন্ধি
আগরবাতি বা লোবান জ্বালিয়ে তিন বা পাঁচ অথবা সাত বার গোসলের খাটে ধোঁয়া দিন অর্থাৎ ততবার খাটের চারপাশে ঘুরার, খাটের উপর মৃত ব্যক্তিকে এভয়েটভাবে শোয়ান, যেমনিভাবে কবরে শোয়ানো হয়। বুক থেকে হাঁটু সহ কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখুন যেন পানি ঢালার পরও সতর ভেসে না ওঠে। সতর্কতার সহিত পর্দার প্রতি সজাগ থেকে ও নম্রভাবে পরিধানের কাপড় খুলে নিন। অনুরূপভাবে নিকফুল, কানের দুল এবং এরূপ অন্যান্য অলংকার থাকে তাও নম্রভাবে খুলে দিন।
আরো পড়ুনঃ কোন দোয়া পড়লে মনের আশা পূরণ হয়
এবার গোসল প্রদানকারী নিজের হাতে গ্লাস পড়ে প্রথমে তাকে উভয়দিকে ইস্তিনজা করান। এরপর নামাজের মত অজু করান, অর্থাৎ মুখমন্ডল কনুইসহ উভয় হাত তিনবার করে ধৌতো করুন অতঃপর মাথা মাসেহ করুন তারপর তিনবার করে উভয় পা ধৌত করুন, মৃত ব্যক্তিকে অজু করানোর সময় প্রথমে হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা, কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার নিয়ম নেই। তবে কোন কাপড় বা পুটলি ভিজিয়ে পা দারা দাঁত, মাড়ি ঠোঁট ও নাকের ছিদ্র মুছে নিন। অতঃপর মাথার চুল ধুয়ে দিন, সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
অতঃপর মৃত ব্যক্তিকে বাম পাশে কাত করে কুল গাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি হালকা গরম আছে আর তাহলে সাধারণ গরম পানি মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রবাহিত করুন। যেন পানি খাট পর্যন্ত পৌঁছে যায়, এরপর ডান পাশে কাত করে অনুরূপভাবে পানি ঢালুন। তারপর হেলান দিয়ে বসান এবং ধীরে ধীরে নিচের দিকে পেটের নিচের অংশে মালিশ করুন এবং পেট হতে কিছু বের হলে তা ধুয়ে ফেলুন। এমতাবস্থায় পুনরায় অজু ও গোসল করানোর প্রয়োজন নেই, পরিশেষে মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাপড়ের পানি ঢেলে দিন। অতঃপর কোন পবিত্র কাপড় দ্বারা তার শরীর ধীরে ধীরে মুছে দিন। সমস্ত শরীর একবার পানি প্রবাহিত করা ফরজ আর তিনবার প্রবাহিত করা সুন্নত।
মৃত ব্যক্তির মাথার চুল ও নখ কাটা
মৃত ব্যক্তির দাড়ি বা চুল আঁচড়ানো অথবা নখ কাটা কিংবা শরীরের কোন অংশের পশম মুন্ডানো বা কাটা অথবা উপড়ে ফেলা নাজায়েজ ও মুকরূ। তাহরিমি, বরং হুকুম এটাই যে অবস্থায় আছে ওই অবস্থায় দাফন করে দেয়া। তবে হ্যাঁ, যদি নখ ভাঙ্গা থাকে তবে নখ নেয়া যাবে আর যদি নখ বা চুল কেটে থাকে তাহলে তা কাপড়ের সাথে রেখে দিন। মৃত ব্যক্তির শরীরে যে অংশ অসুস্থতা ইত্যাদির কারণে পৃথক করা হয়েছে তা সবকিছু দাফন করে দিতে হবে।
রেদওয়ান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url