ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয় - ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয়
প্রতিদিন কয়টা কাঠবাদাম খাওয়া উচিতছোটবেলা থেকে আমাদের বলা হতো শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন। আমরা সকলেই জানি যে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। কিন্তু ভিটামিন ডি এর একমাত্র উৎস হলো শুধু সূর্যই নয়। এমন অনেক খাবার রয়েছে যা থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। নিয়মিত সেই খাবারগুলো তালিকায় রাখলে ভিটামিন ডি এর অভাব এবং বিভিন্ন অসুখের ঝুঁকি কমে আসবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃপ্রায় ৫০% মানুষেরই ভিটামিন ডি এর ডেফিনান্সি হয়েছে। এছাড়াও ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীরের মাংসপেশির ব্যথা ও নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই আজকের আলোচনায় আপনাদের জানাবো ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয় এবং ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয় এ বিষয়ে। তাহলে চলুন আপনাদের সুবিধার্থে ভিটামিন ডি এর সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ভিটামিন ডি কি
ভিটামিন ডি এক ধরনের স্টেরেট হরমোন যা শরীরের প্রোটিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানব দেহে কি পরিমান ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দরকার সেটি নিয়ন্ত্রণ করে এই ভিটামিন ডি। আমাদের মাংসপেশী, হাড় ও দাঁতের সুরক্ষার জন্য ভীষণ ভালো। মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
শরীরে যদি ভিটামিন ডি না থাকে তাহলে অনেক ধরনের মারাত্মক রোগ হতে পারে। প্রায় প্রতিটি মানুষেরই ছোট বড় সকলের শরীরে ভিটামিন ডি প্রয়োজন। সূর্যের আলো এটি প্রাকৃতিক ভিটামিন ডি এর উৎস। এরপর ভিটামিন ডি খাদ্য থেকেও শরীরের সংগ্রহ করা যায়। ভিটামিন ডি যদি শরীরে গ্রহন করা হয় তাহলে আমাদের শরীরের অনেক অংশ সুস্থ থাকবে।
ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়
মানব শরীরের জন্য ভিটামিন ডি হল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ভিটামিন ডি সাধারণ সূর্যের আলো থেকে পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য থেকেও পাওয়া যায়। শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকলে যে সকল লক্ষণ গুলো দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো-
- হাড়ের ব্যথা
- মাংসপেশীর ব্যথা
- বিষন্নতা
- মাথাব্যথা
- দুর্বলতা হওয়া
- স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
- ক্লান্তিবোধ ইত্যাদি
এ সকল লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে। ভিটামিন ডি এর ঘাটতির সাথে একশটি রোগের সম্পর্ক রয়েছে যেমন হারজনিত সমস্যা, হাড় ক্ষয় হাড়ভাঙ্গা এবং রিক্রেস। হৃদরোগের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি, স্ট্রোক, এম আই, হার্ট ফেইলর, ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, বিষন্নতা বা মনমরা, সবসময় মাথাব্যথা থাকা হঠাৎ করে মুড পরিবর্তন হওয়া।
আরো পড়ুনঃ কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভকালেও সমস্যা হতে পারে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, শিশুর অকালে জন্ম, বাচ্চার ওজন কম হওয়া, গর্ভকালীন ও মাতৃত্বকালীন বিষন্নতায় ভোগা, কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, বাচ্চাদের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় না। হাড় বাঁকা হয়ে যায়।
কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে শুধু হাড় নয় শরীরের আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গেও ভিটামিন বি এর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। ভিটামিন ডি শরীরের দুই হাজারের বেশি জিংক তৈরিতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণের জন্য প্রতিদিন অন্তত তিন ঘন্টা রোদে থাকতে হবে। কারণ রোদে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে বিশেষ করে সকালের রোদ।
ভিটামিন ডি এর অভাব কেন হয়
ভিটামিন ডি এর অভাব অনেক কারণে হতে পারে। অনেকেই আছে সঠিক মত খাবার গ্রহণ করেন না। প্রায় সময় দেখা যায় যে ছোট বড় সকলেরই অনেক ক্ষেত্রে খাবারে অরুচি থাকে এক্ষেত্রে তখন ভিটামিন ডি এর অভাব শরীরে দেখা দেয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে রোদে থাকলে এলার্জি হয়। আবার অনেকেই আছে রোদ পছন্দ করেন না।
আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
ভিটামিন ডি এর অভাবে মাথার চুল উঠতে থাকে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন হাত-পা বেশি ব্যথা করে এই সমস্যাটা বেশি দেখা দেয় ও চুল ওঠে প্রচুর পরিমাণে। আবার গরমকালে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয় সেই ঘামে ভিটামিন ডি বের হয়ে যায়। তাই সকলের শরীরের ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। আর অন্তত সকালের রোদটা গায়ে ছোঁয়াতে হবে।
ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার
ভিটামিন ডি দেহের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি আমাদের হাড় ও দেহের গঠনের জন্য অত্যন্ত জরুরী। হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজন ক্যালসিয়াম আর এই ক্যালসিয়াম কে শরীরের জন্য উপযোগী করে তোলে ভিটামিন ডি। ভিটামিন ডি পাওয়া যায় এমন সব খাবারের সংখ্যা খুবই কম। আর যেসব খাবারে ভিটামিন ডি থাকে সেগুলো আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় খুবই অল্প থাকে। আজকে আপনাদের জানাবো কোন খাবারগুলো খেলে ভিটামিন ডি এর অভাব খুব দ্রুত পূর্ণ হবে।
সামুদ্রিক তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত মাছ= সালমন মাছ টুনা মাছ ও পাঙ্গাস মাছ সহ এগুলোতে ভিটামিন ডি রয়েছে। এরমধ্যে সালমন মাছের ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি অনেক বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম সালমন মাছে ৫২৬ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। আর এটি প্রতি দিনের ৬৬% ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করে।
ডিমের কুসুম= যারা মাছ খেতে অপছন্দ করেন তারা চাইলে ডিমের কুসুম খেতে পারেন। একটি ডিমের কুসুমে ৩৭ IU ভিটামিন ডি রয়েছে। যা প্রতিদিনের পাঁচ শতাংশ ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। তবে যাদের হাই ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টরে সমস্যা রয়েছে তারা ডিমের কুসুম খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
ব্রকলি ও ফুলকপি পাতাকপি= ব্রকলি ও ফুলকপি পাতাকপিতে ভিটামিন ডি রয়েছে।
মাশরুম= মাশরুম ভিটামিন ডি সরবরাহ করে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে সাধারণত ১৩০-৪৫০ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন শাকসবজিতেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
কমলার জুস= কমলার জুস খুব কম মানুষেরই অপছন্দ কমবেশি সবাই কমলার জুস খেতে পছন্দ করি। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে একগ্লাস করে কমলার জুস খেতে পারেন। তাহলে প্রতিদিনের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি ১২% পূরণ করতে পারবেন। কেননা একগ্লাস কমলার জুসে ১০০ IU ভিটামিন ডি রয়েছে।
দুধ= দুধ আমাদের হারের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বুদ্ধির বিকাশের জন্যেও জরুরী। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধে ১৫-২২% ভিটামিন দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম।
পনির মাখন ছানা দই= পনির মাখন ছানা দই এ রয়েছে ভিটামিন ডি। এক কাপ দই য়ে আমাদের শরীরে ১৬% ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম।
গরুর কলিজা= গরুর কলিজাতেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত গরুর কলিজা খাওয়া ঠিক নয়।
ওটমিল গম বার্লি বাদাম= ওটমিল গম বার্লি বাদাম এসবেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয়
অতিরিক্ত পরিবারের বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে হতে পারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে রক্তে সর্বত্র মাত্রা বজায় রাখতে দৈনিক ২৫ থেকে ১০০ গ্রাম ভিটামিন ডি গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে দেহের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। অতিরিক্ত পরিবারের ভিটামিন ডি বেশি খেলে হতে পারে হাইপার ক্যাসেমিয়া।
অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।আমরা সকলেই জানি ভিটামিন ডি মূলত খাবার থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ভিটামিন দিয়ে মূলত কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। অতিরিক্ত ভিটামিন ডি এর কারণে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে কিডনির কার্যকারিতা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বারবার প্রস্রাব পাওয়া কিংবা কিডনি স্টোনের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
শরীরে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে পাকস্থলীতে ব্যথা কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা ডায়রিয়ার মত বিভিন্ন হজম সংক্রান্ত দেখা দিতে পারে।তবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন দিয়ে বেশি খেলে হাড়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে সক্ষম।
তাই হাড়ের সর্বোত্তম স্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসক নির্ধারিত মাত্রায় ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম গ্রহণ করুন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন ডি অতিরিক্ত বেশি খেলে খিদে কমে যাওয়া বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়ার মতো বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এগুলো মূলত হাইপার ক্যালসেমিয়ার সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত।
রেদওয়ান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url